স্টাফ রির্পোটার :
কুয়াশার আমেজ কেটে গেছে। তেজ ছড়াচ্ছে দুুপুরের রোদ। হাটের দোকান-পাটে জমতে শুরু করেছে কেঁনাবেচা। এমন সময় হাটে দেখা মিলল এক ধূপওয়ালার। ধূপদানিতে ধূপের ধোঁয়া উড়িয়ে সে ছুটে চলছে এ দোকান থেকে ও দোকান। বকশিস হিসাবে দোকানীরাও খুশি মনে পাঁচ/দশ টাকা গুজে দিচ্ছে তার হাতে।
মঙ্গলবার এমন দৃশ্যের দেখা মিলে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌর শহরে সাপ্তাহিক হাটে।
ধূপওয়ালার নাম আতর আলী (৬২)। বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলার বৈরাটি ইউনিয়নের কাজলা গ্রামে। জীবিকার তাগিদে এই পেশায় সে গত বিশ বছর ধরে।
স্থানীয়রা জানান পূজা-অর্চণায় ধূপের নিত্য ব্যবহার। এছাড়াও ব্যবসায় মঙ্গল ও সুগন্ধির কারণে দোকান-পাটে ধূপবাতি দেয়ার প্রচলন অনেক আগে থেকে। তাই সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার হাটের দিন শহরে দেখা মিলে ধূপওয়ালার। তবে এই পেশা এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
হাটে দাঁড়িয়ে কথা হয় আতরের সাথে। তার মাথায় বাধা লাল কাপড়। বেশভূষাও ফকিরে মত। এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে বলতেই ধূপ ছিটিয়ে ধূপের আগুন জ¦ালিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল সে। নানা কথাবার্তার ফাঁকে নিজের ধূপওয়ালা হয়ে উঠার গল্পটা বের হয়ে আসলো আতরের মুখ থেকেই।
আতর আলী বলেন অভাবের সংসারে পড়াশোনা হয়নি। ছোট থাকতেই কাজ নেই পরের বাড়িতে। কিন্ত বয়স বাড়ায় আগের মত খাটতে পারিনা। তাই পেটের দায়ে ধূপওয়ালার কাজ নেই। তবে এই পেশাতেও খাটুনি কম নয়। একটানা অনেকক্ষণ ধূপদানি নিয়ে দ্রুত গতিতে হাঁটতে হয়।
পূর্বধলা ও গৌরীপুর সহ আশেপাশের হাট- বাজারে দোকান-পাটে ধূপ দেন আতর। এজন্য দোকান ভেদে দুই থেকে সর্বোচ্চ দশ টাকা পান। এতে আয় হয় ৭শ থেকে ৮শ টাকা।
দাম্পত্য জীবনে আতরের স্ত্রী সহ তিন ছেলে- মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে ও এক মেয়ে পড়াশোনা করে। ধূপের আয়ের এই টাকা দিয়েই চলে তার সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনার খরচ।
আতর আলী বলেন ধূপ পবিত্র জিনিস। তবে পূজা-অর্চণার জন্যই ধূপের ব্যবহার হয় বিষয়টা এমন নয়। ধূপ দিলে দোকান-পাট ঘরে সুগন্ধি ছড়ায়। ঘরের মশা তাড়ায়, ভ্যাপসা দুর্গন্ধ দূর হয়। ধূপের গন্ধ দেহ মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
আতরের সাথে কথা বলতে তেজ হারিয়েছে দুপুরের রোদ। বেলা গড়িয়েছে বিকালের পথে। এমন সময় ধূপদানি নিয়ে আতর প্রবেশ করলেন ভুইয়্যা হার্ডওয়্যারে। ধূপ দিয়ে বের হওয়ার পথে থেকে দোকানের পরিচালক রাজু ভুইয়্যা বললেন মুরুব্বি কি ধূপ দিলেন ঘ্রাণই পেলাম না। কথা শোনে থেমে যায় আতর। কৌঠা থেকে একমুষ্ঠি ধূপ ছুড়ে দেন ধূপদানিতে। মুহূর্তেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় দোকান। ধোঁয়ার কুন্ডলিতে দোকানে ছড়িয়ে পড়ে ধূপের স্নিগ্ধ কোমল ঘ্রাণ। খুশি হয়ে রাজু ভুইয়্যা বকশিস গুজে দেয় আতরের হাতে। মৃদু হেসে ইশারায় বিদায় নিয়ে আতর ছুটে চলে সামনের পথে। আর ধূপের ধোঁয়ার কুন্ডলি সুগন্ধি ছড়িয়ে বাতাসে মিলিয়ে যেতে থাকে।
টি.কে ওয়েভ-ইন